হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে কওমি মাদ্রাসাকে সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মার্স্টাস ডিগ্রি সমমান স্বীকৃতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে দেশের কওমিপন্থী ছয়টি বোর্ড নিয়ে গঠিত আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশ (হাইয়াতুল উলইয়া) আগামী রোববার ঢাকায় শুকরিয়া মাহফিলের মাধ্যমে সংবর্ধিত করবে।
শুকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার বিষয়টি হাইয়াতুল উলইয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন।
মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন হেফাজত ইসলামের আমির ও হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফি।
আগামীকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে শুকরিয়া মাহফিল শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১১টায় মাহফিলস্থলে উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে সকাল ৯টায় হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি তার নিজ কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছাবেন।
এছাড়া ঢাকার বাইরে দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইয়াতুল উলইয়ার ও ছয়টি বোর্ডের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন মাদ্রাসায় অবস্থান করছেন বলে সূত্র জানায়। মাহফিল বাস্তাবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ১৭ জন সদস্য বিশিষ্ট মাহফিল কমিটির সদস্যরা শুকরিয়া মাহফিলে সর্বাধিক লোক সমাগমের লক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে শুকরিয়া মাহফিলে সংবর্ধনা নিয়ে কওমিপস্থী আলেম-ওলামাদের মধ্যে চলে আসা মতবিরোধের কারণে মাহফিলের লক্ষ্য অনুযায়ী লোক সমাগম হওয়া নিয়ে সন্ধিহান হাইয়াতুল উলইয়ার ছয়টি বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি মাদ্রসার পরিচালক ও শীর্ষ আলেম-ওলামারা।
এমতাবস্থায় শুকরিয়া মাহফিল নিয়ে দ্বিমত পোষণকারী কওমিপস্থী আলেম-ওলামাদের বিরোধিতার বিষয়টি মাথায় রেখে এবং হেফাজত আমির ও হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফির অবস্থান জানান দিতে মাহফিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বেশ মরিয়া।
ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাহফিলে বেশি সংখ্যক লোক সমাগমে ঘটাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাহফিলের উদ্দেশে আগতদের জন্য যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেফাকের এক শীর্ষ আলেম এ প্রতিবেদককে জানান, শনিবার রাতে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে ১০ হাজারের মত আলেম-ওলামা দুই শতাধিক বাস যোগে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুকরিয়া মাহফিলের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। এদের যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া ব্যবস্থা করেছে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্যরা। এক্ষেত্রে আর্থিক ব্যয় বহন করছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সরকার দলীয় এক সংসদ সদস্য।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাহফিলের প্রস্তুতির ব্যাপারে কমিটির আহবায়ক ও হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান ও মাওলানা আশরাফ আলীসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, শুকরিয়া মাহফিলে আগত আলেম-ওলামারা নিজ খরচে মাহফিলে যোগদান করবেন। তবে লোক সমাগমের ব্যাপারে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। হেফাজত আমিরের উপস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রসঙ্গত, কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মার্স্টাস ডিগ্রি সমমান স্বীকৃতি দেয়ায় গত ২৭ অক্টোবর বেফাক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৫ নভেম্বর হাইয়াতুল উলইয়ার পক্ষ থেকে শুকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
আগামীকাল ৪ নভেম্বর (রোববার) রাতে নির্বাচন কমিশন আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে।
তফসিলের পর সোহরাওয়ার্দীতে এ ধরনের অনুষ্ঠান নানা সমস্যার মুখে পড়তে পারে বলে শুকরিয়া মাহফিল একদিন এগিয়ে ৪ নভেম্বর করার সিদ্ধান্ত নেয় আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ।